স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার ২ নং দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসেনেরখীল গ্রামের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন। পেশায় একজন রিক্সাচালক ছিলেন। কক্সবাজার ও কুমিল্লা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল ও গাঁজা এনে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করে মাত্র কয়েক বছরের মাথায় তিনি এখন কোটিপতি। কিনেছেন চট্টগ্রাম শহরে তিনতলা বাড়িও গাড়ি। তবে গ্রামের বাড়িতে তিনি অট্টালিকা করেন নাই। কারণ ২ নং দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসেনেরখীল গ্রামে বসেই তিনি মাদক ব্যবসা করেন। তাই নিজেকে আড়াল করতে এই কৌশল। জানা গেছে, তার বোন, বোনজামাই ও বোনের মেয়ের জামাইকে নিয়ে এলাকায় গড়ে তুলেন মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য। সম্প্রতি ঢাকার রূপগঞ্জ এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজাসহ জাকিরকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে জামিনে বেড়িয়ে পুনরায় শুরু করেন মাদক ব্যবসা।
জানা যায়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানায় জাকির ও বোন জামাই ও বোনের মেয়ের জামাইয়ের বিরুদ্ধে একাধিক মাদকের মামলা চলমান রয়েছে।
কে এই জাকির
গত ৩ বছর আগেও চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকায় রিক্সা চালকের কাজ করতেন ২ নং দাঁতমারা ইউনিয়নের হোসেনেরখীল গ্রামের মো. জাকির হোসেন। জাকির রিক্সা চালকের পেশা ছেড়ে তার বড় বোনের জামাই কক্সবাজারের বাসিন্দা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী গফুর কোম্পানীর মাধ্যমে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ৩৫ বছর বয়সী জাকিরকে। বর্তমানে তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর থানা অন্তর্গত এলাকায় ১৪ টি গ্রাম নিয়ে মাদকের একটি বিশাল বাহিনী তৈরি করেছেন। এই বাহিনীর অধীনে রয়েছে ৩০ জন সদস্য, ১০টি মোটরসাইকেল ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তাছাড়া মাদক পাচারের জন্য বেশ কয়েকজন নারীকে ব্যবহার করে এই জাকির। নারীদেরকে দিয়ে ইয়াবার আড্ডা এবং দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ব্যবসায় টিকে থাকতে নিজের এলাকার জনপ্রতিনিধির সাথে টাকার বিনিময়ে সখ্যতা করে গড়ে তুলেছেন বিশাল মাদকের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটকে টিকিয়ে রাখতে নিজের এলাকা এবং জেলা শহরের আন্ডারওয়ার্ল্ড খ্যাত কতিপয় প্রভাবশালীদেরকে প্রতিদিন মাদকের সৌজন্য কপি সরবরাহ করে জাকির ও তার লোকজন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা জানান, বোন জামাই ও বোনের মেয়ের জামাইয়ের মাধ্যমে রাতের বেলা মাদক বহনের কাজ করেন। এখন তিনি ভূজপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে সরাসরি দিনের বেলায় হেঁয়াকো বাজার দিয়ে রামগড় ও বারৈয়ারহাট, ফেনী, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহ, গাজীপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরবঙ্গেও নিয়মিত মাদক পাচার করেন তিনি।
একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জাকির বাহিনীর বিরুদ্ধে হোসেনেরখীল গ্রামে কোনো সাধারণ মানুষ কথা বলার সাহস পায় না। ইতোপূর্বে গ্রামের কয়েকজন প্রতিবাদ করায় বিভিন্ন সংস্থার লোকদের মাধ্যমে মাদকের মামলায় তাদেরকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।