• শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০৯ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]

চট্রগ্রাম নগরীর ১১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : সোমবার, ১২ জুন, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : চট্রগ্রাম মহানগরীর পৃথক ১১টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পাহাড় ধসের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ওয়ার্ডগুলোর ৪ হাজার ৬২৫টি ভবন এবং অবকাঠামো আছে এ পাহাড় ধসের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়। আছে ২৮টি প্রথমিক বিদ্যালয় এবং ১৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। এছাড়া ওয়ার্ডগুলোতে বিদ্যমান পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসতি গড়ে উঠায় ধস হলে বাড়তে পারে প্রাণহানি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রণীত মাল্টি হ্যাজার্ড কন্টিনজেন্সি প্ল্যান ফর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বা চট্টগ্রাম শহরের আপদকালীন কর্মপরিকল্পনায় এসব তথ্য উঠে আসে। এতে পাহাড় ধসের কারণ এবং পাহাড় ধস রোধ ও প্রাণহানি এড়াতে বৃক্ষরোপণ ও বনায়নে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়েছে।

আপদকালীন কর্মপরিকল্পনাটি পর্যালোচনায় জানা গেছে, অতীতে নগরের যে সব পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বার পাহাড় ধস হয়েছে এবং সর্বাধিক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই ওয়ার্ডগুলোকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই হিসেবে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে– ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২নং জালালাবাদ, ৩নং পাঁচলাইশ, ৭নং পশ্চিম ষোলশহর, ৮নং শুলকবহর, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী, ১৩নং পাহাড়তলী, ১৪নং লালখান বাজার, ১৫নং বাগমনিরাম, ১৬নং চকবাজার এবং ২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ড। এসব ওয়ার্ডে লালখান বাজার মতিঝর্ণা, টাঙ্কির পাহাড়, বাটালি হিল, গোলপাহাড়, এ কে খান পাহাড়, রৌফাবাদ পাহাড়, ফিরোজশাহ, কুসুমবাগ, জালালাবাদ পাহাড়, মুক্তিযোদ্ধা পাহাড়, আরেফিন নগরসহ ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে।

কর্মপরিকল্পনাটির তথ্য অনুযায়ী, নগরে প্রায় ৩০ হাজার ৭৮৬ জন মানুষ পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৭১ জন শিশু আছে। নিয়মিত পাহাড় ধস হলে প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ ধসে পড়া কাঠামোর ভিতরে আটকা পড়বে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ মারা যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের অন্যান্য জায়গায় পুনর্বাসন না হওয়া পর্যন্ত শহরের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের বেশিরভাগ ঢালে অবৈধ দখলদার থাকে। পুনর্বাসন সমস্যার সমাধান করা না গেলে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় পাহাড় ধসের কারণে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি বাড়বে।

এদিকে নগরে পাহাড় ধসের ঘটনা পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত দুই যুগে নগরে ২৫৯ জন মারা গেছেন পাহাড় ধসে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল (২০২৩) আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনায় মারা যায় একজন। এছাড়া দুই যুগ আগে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালের ১৩ আগস্ট। ওইদিন সিআরবি পাহাড়ের একাংশের সীমানা প্রাচীরসহ পাহাড় ধসে মারা যায় ১০ জন।

অবশ্য গত দুই যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৭ সালের ১১ জুন। ওইদিন চট্টগ্রামের পৃথক সাতটি স্থানে পাহাড় ধসসহ ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। আজ রোববার সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ১৬ বছর পূর্ণ হয়েছ। ওই ঘটনার পর তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে (রাজস্ব) আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসনকে (রাজস্ব) সদস্য সচিব করে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ওইদিন রেলওয়ে পাহাড়তলী এলাকার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ১২ জনের মৃত্যুর জন্য গঠিত একটি কমিটি ১৪টি এবং নগর ও আশেপাশের এলাকায় ভূমিধসে প্রাণহানির জন্য গঠিত ৩৬টি সুপারিশ করে। ওইসব সুপারিশের বেশিরভাগ আজও বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে প্রায় প্রতিবছর নগরে পাহাড় ধসে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড় কাটার ফলে ভূমির ঢাল বৃদ্ধি পায়, গাছপালার আচ্ছাদন বিনষ্ট হয়, মাটির দৃঢ়তা হ্রাস পায় এবং বৃষ্টির পানি মাটির গভীরে প্রবেশ করে। এতে পাহাড় ধস হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ