স্টাফ রিপোর্টার : আর কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। তবে মসলার বাজারে ফিরছে না স্বস্তি। গতবারের চেয়ে এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে ভোক্তাদের কিনতে হবে অধিকাংশ মসলাজাতীয় পণ্য। দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও মসলার বাজার অস্থির। গতবার খুচরা বাজার থেকে ভোক্তারা প্রতি কেজি আদা ১০০ থেকে ১২০ টাকায় কিনতে পারলেও এবার গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকার ওপরে। একইভাবে গত বছর এক কেজি রসুন ৮০ থেকে ১০০ টাকায় কেনা গেলেও এবার কিনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা দরে। গতবারের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে জিরা, এলাচ, লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ, শুকনো মরিচ, ধনিয়া, হলুদসহ অন্যান্য মসলা।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় বাজারে চাহিদা যে হারে বেড়েছে, সে হারে বাড়েনি সরবরাহ। তাই প্রায় পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়ার কথা বলছেন তাঁরা। তবে সংকট ও সরবরাহ ঘাটতির কথা বলে অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ ক্যাব ও ভোক্তাদের। এদিকে আমদানির সঙ্গে জড়িতদের নামসহ যাবতীয় তথ্য চট্টগ্রাম থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। চীননির্ভর আদার বাজার এখন দখলে নিয়েছে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া। আগে স্বাভাবিকভাবে খাতুনগঞ্জের প্রায় আড়তে পেঁয়াজের পাশাপাশি আমদানি করা আদা ও রসুনের সারি সারি বস্তা দেখা যেত। তবে এখন নেই সেই দৃশ্য। কিছু প্রতিষ্ঠানে কম সংখ্যক আদা ও রসুন চোখে পড়ছে। এখন খাতুনগঞ্জে মানভেদে পাইকারিতে প্রতি কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তবে ভালো মানের ইন্দোনেশিয়ার আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার ওপরে। খুচরা বাজারে ভালো মানের এক কেজি আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকার ওপরে। আর মাঝারি মানের আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। এসব রসুন খুচরাতে কিনতে ভোক্তাদের গুনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। খাতুনগঞ্জে প্রধানত টেকনাফ স্থলবন্দর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে বেশিরভাগ পণ্য আসে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, চীন থেকে সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল দুই কনটেইনারে ৫৪ টন আদা আমদানি করা হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, আদা আমদানির সঙ্গে অর্ধশত আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার টন এবং রসুনের চাহিদা ৭ লাখ ১ হাজার টন। দেশে আদা-রসুন আমদানির ৯০ শতাংশই আসে চীন থেকে।
কিছুদিনের ব্যবধানে অধিকাংশ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা, এলাচ ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০, দারচিনি ৩২০ থেকে ৩৫০, গোলমরিচ ৬৫০ থেকে ৭০০, শুকনো মরিচ ৩৪০ থেকে ৪০০, ধনিয়া ১৭০ থেকে ১৯০ ও হলুদ ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। গত বছর এক কেজি শুকনো মরিচের গুঁড়া মানভেদে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় কিনতে পারলেও এবার একই মরিচ কিনতে হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, যা সর্বোচ্চ দামের রেকর্ড।
খাতুনগঞ্জের মসলাজাতীয় পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বোলাই কুমার বলেন, ‘ঈদ ঘনিয়ে আসায় বাজারে প্রতিনিয়ত বাড়ছে মসলার চাহিদা। তবে বাড়ছে না সরবরাহ। আদা ও রসুনের মূল বাজার চীন। চীনে বুকিং রেট বেড়ে যাওয়ায় দেশে সংকট তৈরি হয়েছে। এতে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে বাজার। সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়বে।’ কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় বর্তমানে পেঁয়াজবাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। তবে আমদানি সংকটে আদা ও রসুনের বাজার চড়া। সরবরাহ বাড়লে দাম কিছুটা কমতে পারে।’