স্টাফ রিপোর্টার : একবারে সহনীয় মাত্রায় এখন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি। দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে সংস্থাটির সরবরাহকৃত পানিতে এখন লবণের মাত্রা কমে গেছে। তাতে দীর্ঘ তিন মাস ধরে ওয়াসার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা এখন ঘুচে গেছে। এতে স্বস্তি এসেছে ওয়াসা গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের। চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় তিনমাস ওয়াসা পানির লবণাক্ততায় ভুগতে হয় গ্রাহকদের। তাতে ভোগান্তিতে পড়েন তারা। লবণ পানি পানের অনুপযুক্ত হওয়ায় বিকল্প হিসেবে অনেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গভীর নলকূপের পানি সংগ্রহ এবং জার কিংবা মিনারেল ওয়াটার ব্যবহার করেছেন।
চট্টগ্রাম ওয়াসা হালদা নদী থেকে মোহরা পানি শোধনাগার ও মদুনাঘাটস্থ শেখ রাসেল পানি শোধনাগার প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীতে দৈনিক ১৮ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করে। কিন্তু এ দুইটি প্রকল্পের সরবরাহকৃত পানিতে গত তিনমাস ধরে মাত্রাতিরিক্ত লবণ পাওয়ায় সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা। অপরদিকে অতিরিক্ত লবণের কারণে উৎপাদনও কমিয়ে ফেলতে হয় ওয়াসাকে। তাতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা।
ওয়াসা সূত্র জানায়, এবার মোহরা পানি শোধনাগারে ইনটেকে জোয়ারের সময় (নদীর যে স্থান থেকে পানি উত্তোলন করা হয়) প্রতিলিটার পানিতে সর্বোচ্চ ৩৫০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া গেছে। একই অবস্থা মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগারেও। এ প্রকল্পের ইনটেকে পাওয়া গেছে প্রতিলিটারে ২০০০ মিলিগ্রাম। মাত্রাতিরিক্ত লবণের কারণে পানি শোধনাগার দুইটি দৈনিক ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়। যদিও ভাটার সময় লবণের মাত্রা থাকে তুলনামূলক কম। ওয়াসা ওইসময়ে পানি উত্তোলন করে নগরীতে সরবরাহ দিয়েছিল।
সূত্র জানায়, গত কয়েক বছর ধরে নদীর পানিতে লবণের এ মাত্রা তুলনামূলক কম থাকলেও এবার হঠাৎ বেড়ে যায়। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি ছাড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরি হয়। এবার তেমন বৃষ্টি না হওয়ায় কাপ্তাই হ্রদে পানির পরিমাণ কমে যায়। কাপ্তাই হ্রদের পানি এসে পড়ে কর্ণফুলী নদীতে। পানির পরিমাণ কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবণাক্ত পানি নদীর অনেক ভেতরে প্রবেশ করে। এমন কি হালদা নদীর মোহরা ও মদুনাঘাট শেখ রাসেল পানি শোধনাগার থেকে ওয়াসা পরিশোধনের জন্য যে পানি সংগ্রহ করে সেখানে দ্রুত লবণ পানি চলে আসে। তাই ওয়াসার পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণ মেলে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘দফায় দফায় বৃষ্টি হওয়ায় জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে ওয়াসার পানিতে লবণের মাত্রা কমে যায়। বর্তমানে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার স্থলে নদীর পানিতে জোয়ারের সময়ে প্রতিলিটারে ১০০ মিলিগ্রাম এবং মোহরা পানি শোধনাগার স্থলে নদীর পানিতে প্রতিলিটারে ২০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণ পাওয়া যাচ্ছে। তবে ভাটার সময়ে দুটি শোধনাগারে লবণের পরিমাণ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিলিটারে সর্বনিম্ন ২০ থেকে ৪০ মিলিগ্রাম। এটি মানব শরীরের জন্য একবারে সহনীয় মাত্রা।’
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্ণফুলী ও হালদা নদীর চারটি পানি শোধনাগারে দৈনিক ৪৬ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু লবণাক্ততা ও কর্ণফুলী নদীতে শেওলা জমে যাওয়ায় এসব প্রকল্প থেকে মার্চ থেকে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত পানি উৎপাদন হয়েছে ৩৫ থেকে ৩৬ কোটি লিটার। তাতে পরিস্থিতি সামাল দিতে ওয়াসাকে রেশনিং এর পথ বেচে নিতে হয়েছিল। তবে দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে লবণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসার ফলে স্বস্তি ফিরে সকলের মাঝে।